যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বাঁকুড়া গ্রামে ৭ অক্টোবর অগ্নিদগ্ধ শিশু আল আমিন (৫) শুক্রবার সন্ধ্যায় তার নানীর বাড়িতে মারা গেছে।
৮ অক্টোবর গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আল আমিনকে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আরও অবনতি হলে তাকে বাড়ি নিয়ে যান তার নানী।
বাঁকুড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাব-ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুটি আগুনে পুড়ে মারা গেছে। মামলার তদন্ত করছে পিবিআই।
৭ অক্টোবরের ঘটনার পরে শিশুটির পিতা দাউদ সরদার বাদী যশোর জজ কোর্টে হত্যা চেষ্টার মামলা করেন নানী সাকিরন নেছাকে আসামি করে।
তবে শিশুটির মা ও নানীর দাবি, সেদিন রাতে পাটকাঠি দিয়ে মশারিতে আগুন ধরিয়ে আল আমিনকে হত্যার চেষ্টা করেন দাউদ সরদার ও তার লোকজন।
আর শিশুটির বাবার দাবি, এ ঘটনায় তারা জড়িত নন। ‘অতিরিক্ত’ ১০ লাখ টাকা না দেয়ায় তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
শিশুটির মাকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৫ সালে সাকিরন নেছার করা মামলায় দাউদ সরদার ৮ মাস ও তার স্কুল শিক্ষিকা মেয়ে রোকেয়া খাতুন ২৩ দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন।
জামিনের শর্ত হিসেবে সেসময় শিশুটির মাকে বিয়ে করলেও পরে ডিভোর্স দিয়ে দেন দাউদ সরদার। সেই মামলার রায় হওয়ার কথা আগামী ১ নভেম্বর।
সাকিরন নেছা জানান, দাউদ সরদারের বয়স ৬৫ বছর। ছেলেমেয়েরা অনেক বড়, উচ্চ শিক্ষিত ও বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেন।
তিনি বলেন, ‘৫ বছরের ছোট বাচ্চা যখন তাকে আব্বা-আব্বা করে ডাকেন, তখন তাদের সম্মানে বাধে। এজন্য তারা বাচ্চাটাকে তারা মেরে ফেলতে চেয়েছে। বুধবার (৭ অক্টোবর) রাত ১টার দিকে ঘুমন্ত আল আমিনের মশারিতে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন দাউদ সরদার ও তার পরিবারের লোকজন।
‘তখন আমরা অন্য ঘরে ছিলাম। পরে আল-আমিনের চিৎকারে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি।’
শিশুটির নানী বলেন, তিনি অত্যন্ত অভাবী মানুষ। এ কারণে দাউদ সরদারের বাড়িতে কাজ করতেন। কাজ করার সুবাদে তার কিশোরী কন্যার যাওয়া-আসা ছিল দাউদ সরদারের বাড়িতে। এ সুযোগে দাউদ সরদার তার কন্যাকে ধর্ষণ করেন। এতে তার কিশোরী কন্যা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। আল আমিন সেই সন্তান।
সাকিরন নেছা জানান, এ ঘটনায় তিনি ২০১৫ সালে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে ধর্ষণের মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষায় শিশুটি দাউদ সরদারের বলে প্রমাণিত হয়। তখন আদালত তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়।
গ্রেফতার হওয়ার পর মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ার শর্তে জামিন পান দাউদ সরদার। তবে আদালতের নির্দেশে বিয়ে করলেও বাচ্চা ও স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেননি তিনি। মেয়েটিকে ডিভোর্স দিয়ে দেন দাউদ সরদার। তাই মেয়েটি তার বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। এক পর্যায়ে অন্য এক জায়গায় তার বিয়ে হয়।
ডিএনএ পরীক্ষায় দাউদ সরদার শিশুটির পিতা প্রমাণিত হলে আদালত তাকে স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ ১২ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়।
সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনেছেন জানিয়ে দাউদ সরদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাকিরনকে আমি ওই ১২ লাখ টাকা দিয়েছি আদালতের মাধ্যমে। কিন্তু সাকিরন আমার কাছে আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আল-আমিনকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’